পূজায় কেমন হবে আপনার সাজ?

পূজায় কেমন হবে আপনার সাজ?

আজ বাদে কাল ই শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাঙালিদের সবচাইতে বড় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা। তাই চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি। আর পূজার মৌসুমে তরুণ, তরুনীসহ সবার কাছেই বেশি প্রাধান্য পায় সাজ পোশাক। আর সেখানে অনেকের মদ্ধে চলে প্রতিযোগীতা, সবার মদ্ধে নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরার। পূজার দিন পোশাকের সঙ্গে মানানসই সাজ না হলে সবকিছুই যেন ভেস্তে যায়। তাই আগে থেকে নিন পূজার সাজের প্রস্তুতি।
মেয়েদের জন্য পূজোর পোশাক মানেই সাদা-লালপেড়ে শাড়ি। আবার শাড়ির জায়গায় সালোয়ার-কামিজ বা চুড়িদার কামিজ,কূর্তি কিংবা প্লাজোর সাথে লং কামিজ এর ট্রেডিশন চলছে এখন। তবে যাই পড়ের না কেন সেটা হতে হবে বয়সের সঙ্গে মানানসই। আর সাজটাও যে হতে হবে পোশাকের সঙ্গে সংগতিপূর্ন। সকালে চোখের সাজ হালকা রেখে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক লাগানো যেতে পারে। শাড়ির সঙ্গে কপালে টিপ আর হাতে চুড়ি না হলে সাজে পূর্ণতাই আসবে না।
চিত্রঃপূজার সাজ।ছবিঃসংগৃহীত
পূজার সাজ।ছবিঃসংগৃহীত

মুখের মেকআপ

উৎসবে আমরা সবাই চাই ফ্রেশ আর সুন্দর দেখতে। মেকআপ করার সময় তাই আবহাওয়ার কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। বর্ষা, গরম মিলিয়ে চলছে এখনকার আবহাওয়া। ফলে মেকআপ করা বেশ মুশকিল। এজন্য কিছু নিয়ম মেনে নিলে মেকআপ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। সঠিকভাবে মেকাপ করলে আপনি থাকবেন সারাদিন ফ্রেশ উজ্জ্বল।
এ সময়ের মেকআপ হবে অন্য সময়ের চেয়ে একটু অন্যরকম। দিন আর রাতের মেকআপ হবে আলাদা। দিনের সাজসজ্জা হবে ন্যাচারাল, লাইট ও সফট। আর রাতের মেকআপ হবে একটু গর্জিয়াস। মেকআপ করার সময় খেয়াল রাখবেন মেকআপ যেন খুব চড়া না হয়। দিনের বেলার সাজ হলে মুখের মেকআপ হালকা রাখুন। বেজ মেকআপের জন্য পুজোর সারা দিনের সাজে অবশ্যই আপনার স্কিন অনুযায়ী ম্যাচ করে বা এক ১/২ শেড উজ্জ্বল মেকআপ নির্বাচন করা প্রয়োজন। এতে আপনার ন্যাচারাল লুক ফুটে উঠবে।
রাতে উৎসবের মেকআপ হতে হয় একটু গর্জিয়াস। মুখ পরিষ্কার করার পর এক টুকরো বরফ ঘষে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার বা অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লোশন নিয়ে মুখ মুছে নিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মুখে, কপালে, নাকে ও থুঁতনিতে ফাউন্ডেশন ফোঁটা ফোঁটা করে লাগিয়ে নিন। ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে ফাউন্ডেশন ভালো করে ব্লেন্ড করুন। গরমে ক্রিম ফাউন্ডেশন একেবারেই ব্যবহার না করাই ভালো। ওয়াটার বেসড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। নিজের স্কিন টোনের সঙ্গে ম্যাচ করে ফাউন্ডেশন লাগাবেন। এতে ন্যাচারাল লুক বজায় থাকবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মুখে, গলায়, ঘাড়ে কমপ্যাক্ট লাগিয়ে নিন।

ব্লাশন
পরিপূর্ণ মেকআপের ক্ষেত্রে সঠিক ব্লাশনের ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্লাশনের ওপর ন্যাচেরাল লুক অনেকটাই নির্ভর করে। তাই ব্লাশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ত্বকের রঙের সঙ্গে মানানসই ব্লাশন ব্যবহার করতে হবে। মেকআপ লাগানোর পর আপনার গালে ব্রাশ দিয়ে ব্লাশন লাগিয়ে ভালোভাবে মুখের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এতে আপনার গালে একটি সুন্দর আভা ফুটে উঠবে।

চোখ
চোখের মেকআপ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চোখের মেকআপের ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে আপনাকে কতটা সুন্দর দেখাবে। দিনে চোখের মেকআপ হবে হালকা, আই পেন্সিল ও মাসকারা দিয়ে চোখ হাইলাইট করুন। খুব সরু করে ওপরের পাতায় আইলাইনার লাগান। তবে লিকুইড আইলাইনারের পরিবর্তে আই পেন্সিল ব্যবহার করুন। আইশেড দিতে চাইলে আইলাইনার দেয়ার আগেই বেইজ কালার শেড ব্যবহার করতে পারেন হালকাভাবে।আইশ্যাডোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্রাউন, ব্রোঞ্জ, গোল্ডেন, কপার এবং চাহিদা অনুযায়ী আইলাইনার ও ২/৩ কোট মাশকারার প্রলেপ দিন। চোখ উজ্জ্বল হবে আবার মেকআপ চড়া হবে না। রাতে উজ্জ্বল রঙের আইলাইনার ব্যবহার করুন। ফ্রস্টেড হাইলাইট ব্রো বোনে লাগান। স্মোকি লুক চাইলে স্পঞ্জ দিয়ে আইলাইনার ঘষে দিন।

লিপস্টিক
দুর্গাপূজায় এক প্যাঁচে লাল-সাদা গরদ শাড়ি, চুলের সাজে খোঁপা বা খোলা রাখা লম্বা চুল, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে লাল টিপ, হাতে শাখা—এ সাজে খুব সহজেই আমরা ঠোঁটে লাল লিপস্টিকই পছন্দ করি। তবে এক্ষেত্রে আপনার চোখের মেকআপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চোখের মেকআপকে গুরুত্ব দিতে চাইলে ঠোঁটকে হালকা রাখতে হয়। মুখে মেকআপ না করেও নজর কাড়তে পারেন দারুণ শেডের লিপস্টিক দিয়ে। লাল-মেরুনের মতো গাঢ় রং না নিয়ে মভ গোলাপির মতো হালকা ন্যাচারাল রং বেছে নিতে পারেন অথবা ফ্রস্টি লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁটে শাইন আসবে। পিঙ্ক বা মভ রঙের লিপস্টিক বাছুন। দিনে শুধু লিপগ্লস লাগাতে পারলেই ভালো। রাতে গাঢ় রং লাগান। প্লাম, ওয়াইন, বারগান্ডি, কোরাল, ব্রঞ্জ রঙের লিপস্টিক ট্রাই করুন। ন্যুড ন্যাচারাল লুকই ঠোঁটের জন্য এ সময় আদর্শ। পার্টি বা অনুষ্ঠানে গেলে হালকা করে লিপ লাইনার দিয়ে আউটলাইন করে নিন। তারপর ব্রাশ দিয়ে লিপ কালার লাগান। টিস্যু দিয়ে হালকা করে অতিরিক্ত লিপস্টিক মুছে নিন। তারপর আর একবার লিপস্টিক লাগান। শেষে লিপগ্লস লাগিয়ে টাচআপ করুন। যদি ঠোঁট শুকনো হয় ম্যাট লিপস্টিক না লাগিয়ে গ্লসি লিপস্টিক লাগান। ঠোঁট পাতলা হলে হালকা রঙের এবং গ্লসি লিপস্টিক ট্রাই করতে পারেন।

নখ
নখ পরিষ্কার করে সঠিক শেপে কেটে নিন। কালারলেস বেস কেটে লাগিয়ে শুকনো করে নিন। পরের স্টেপে প্রথমে নেইলপলিশ লাগিয়ে ১০ মিনিট পর আবার নেইলপলিশের সেকেন্ড কোট লাগান। শুকিয়ে গেলে আর একবার কালারলেস বেসকোট লাগিয়ে ফিনিশ করুন। পায়ের পাতায় লাগিয়ে নিতে পারেন আলতা।

চুল
চেহারার ধরন, সময়, পোশাক, কোথায় ঘুরতে যাচ্ছেন—সবকিছুর সঙ্গে মানানসই হওয়া চাই আপনার চুলের স্টাইল। কারণ, ঠিকঠাক মতো চুলের স্টাইলই এনে দিতে পারে আপনার সাজের পরিপূর্ণতা। আর পরিপূর্ণ একটি সাজ আপনার ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে সহায়ক। তাই কৌশল হিসেবে আগেভাগেই চুল বাঁধার কয়েকটি ধরন রপ্ত করে রাখতে পারেন। এবারের পূজায় পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ঝটপট চুলের সাজটি সেরে নিতে আর বেগ পেতে হবে না। চুলের স্টাইল গরম হওয়ায় বেঁধে নেয়াই ভালো, তবে খোলা চুলে স্বচ্ছন্দ্য থাকলে অসুবিধা নেই। চুলগুলোকে ঠিকমতো গুছিয়ে নিলে মেকআপ আরো ফুটে উঠবে। বেনী বা খোঁপা করলে চুলে জড়িয়ে নিন কোন ফুলের মালা।

অনুষঙ্গ
পূজায় সাজের ক্ষেত্রে আপনার অনুষঙ্গ সামগ্রী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কানের দুল, গলার মালা, খোঁপার কাঁটা, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে লাল টিপ এসবই পূজার সাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়ার ভিন্ন ভিন্ন ধরন আছে কিন্তু বিবাহিত মেয়েদের কাছে সিঁথিতে সিঁদুর কেবলমাত্র সাজের অনুষঙ্গ নয় পাশাপাশি হাতের শাঁখা-পলাও ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। কানের দুল, গলার মালা, খোঁপার কাঁটা সবই নির্ভর করে সাজের বিশেষত্ব, পোশাকের ধরন এবং মানুষটির পছন্দ ও ব্যক্তিত্বের ওপর। সুগন্ধি আপনার সৌখিনতা। পারফিউম লাগিয়ে তৈরি হন। পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে জুতো ও ব্যাগ নিন।

টিপস

* গরমে মেকআপ দীর্ঘক্ষণ ভালো রাখার জন্য মেকআপ শুরুর আগে পরিষ্কার কাপড়ে আইস কিউব জড়িয়ে ভালো করে মুখ মুছে নিন। রোমকূপের মুখ বন্ধ করতে সাহায্য করবে। ঘাম কম হবে। মেকআপ বসবে ভালো।
* মেকআপ করার পর বারবার মুখে হাত দেবেন না। মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে। ব্যাগে টিস্যু রাখুন । ঘাম হলে হালকা করে টিস্যু দিয়ে মুছে নিন।
* মেকআপ করুন তবে নিজের ন্যাচারাল লুকটাকে প্রাধান্য দিয়ে। দিনে বেশি করে পানি পান করুন। সতেজ থাকুন আর উৎসবে মাতিয়ে রাখুন নিজেকে।

No comments:

Post a Comment

নারকেল তেল দিয়েই দূর করুন খুশকি!

নারকেল তেল দিয়েই দূর করুন খুশকি! নারকেল তেল দিয়েই দূর করুন খুশকি! শীত, গরম বা বর্ষাকালেও খুশকির যন্ত্রনা যেন মেটে না। পার্লারের আহাম...

Our Popular Posts