ডিমের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ

ডিমের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ

ডিম সহজে পরিপাকযোগ্য অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। ডিমে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি২, টোটাল ফ্যাট, ওমোগ-৩ ফ্যাটস, ভিটামিন এ-ডি-ই ও কে; ক্যারোটিনয়েডস, ভিটামিন বি৫, বি৬, বি১২; ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি১, বায়োটিন, সোলিনিয়াম প্রভৃতি রয়েছে। হাঁসের ডিম এবং মুরগির ডিম, দুটোই ভালো। পুষ্টিমূল্যের বিবেচনায় হাঁস ও মুরগির ডিম প্রায় একই মানের বলা যায়। কিন্তু ডিম খাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য সচেতন লোকেরা প্রায়ই অনুমান নির্ভর কিছু ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। তারা মনে করেন ডিম খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বা হার্ট অ্যাটাক/স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। আবার অনেকে বিশেষ করে মহিলারা মনে করেন যে ডিম শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে যথেষ্ট অবদান রাখে। তাছাড়াও ডিম সম্পর্কে আমাদের আরো নানা রকম ভুল ধারণা রয়েছে, যেগুলোর আদৌ কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। ফলে অনেকেই তাদের খাদ্য তালিকা থেকে ডিম বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুনাগুণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক ছোট একটা ডিমে কি কি গুনাগুন বিদ্যমান আছে।
চিত্রঃডিমের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
ডিমের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ

ডিমের পুষ্টি উপাদান শরীরে যেসব উপকার করে

প্রোটিনের অন্যতম উৎসঃ ডিমকে বলা হয় প্রোটিনের অন্যতম উৎস। ডিম পেশি, অঙ্গ, ত্বক, চুল এবং বিভিন্ন টিসুর জন্য প্রোটিন হরমোন, এনজাইম এবং অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে।

রক্তশূন্যতা দূর করাঃ আয়রন মানব কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে ও রক্তশূন্যতা দূর করে। ডিমে বিদ্যমান আয়রন সহজে হজম হয়। ফলেট নতুন কোষ তৈরি ও রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং গর্ভবতী মায়েদের গর্ভপাতের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।

হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়ঃ এলডিএল কোলস্টেরলকে মন্দ কোলস্টেরল হিসেবে বলা হয়। এটি ডিম খেলে কমে যায়। তাই ডিম খাওয়ায় হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে না বরং কমে যায়।এটা হার্টকে ভালো রাখে। এ জন্য ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার দেহে এনার্জি বা শক্তি প্রদান করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ডিম দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। একটি বড় ডিমে রয়েছে প্রায় ২২ শতাংশ আরডিএ বা সেলেনিয়াম। এটি শিশুদের পুষ্টি চাহিদা মেটাতেও বিশেষভাবে কার্যকর, যা তাদের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।

উদ্যম শক্তি যোগায়ঃ একটি ডিমে রয়েছে দৈনিক চাহিদা পূরণের উপযোগী ১৫ শতাংশ ভিটামিন বি। দৈনিক ডিম খেলে দেহের ভিটামিন বি-র চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে যা দেহে শক্তি যোগায়।

ত্বক ও চুলের উন্নতিঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকায় ডিম সুস্থ চুল, ত্বক, চোখ ও লিভার গঠন করতে সহায়তা করে। ভিটামিন ‘এ’ ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। এটা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। ডিমের ভিটামিন দেহের নার্ভাস সিস্টেম উন্নত করে এবং মাংসপেশির উন্নয়ন ঘটায়।

মস্তিষ্কের উন্নতিঃ ডিম মস্তিষ্কের প্রচুর উন্নতি ঘটায়। এতে রয়েছে মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, যার নাম কোলিন। কোলিন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা রক্ষা করে ও মস্তিষ্ক ভালো রাখে।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়ঃ ডিম মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে ভূমিকা রাখে। এটি মানুষের মনের ওপর প্রভাব ফেলে।

হাড় ও দাঁত মজবুত করাঃ ডিমের উপাদান আপনার হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে। ডিম প্রাকৃতিক ভিটামিন ডি-এর উৎস। এটি ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে সহায়তা করে। হাড় এবং দাঁতের জন্য ভিটামিন ‘ডি’ খুবই উপকারী।

পূর্ণতার অনুভূতিঃ পেট ভরে খাওয়া হলেও আমাদের ক্ষুধা লাগতে পারে। আর এতে বাড়তি খাবার খেয়ে দেহের ওজন বেড়ে যেতে পারে। ডিমের উপাদানগুলো আপনাকে খাওয়ার পর পেটে পূর্ণতার অনুভূতি দেবে। এতে বাড়তি খাওয়ার ক্ষুধা কমে যায়।

দেহের ওজন নিয়ন্ত্রনেঃ ডিম খেলে দেহের ওজন কমে একথা অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে যে পরিমিত মাত্রায় ডিম খেলে দেহের ওজন কমানো সম্ভব। মূলত ডিমে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকায় তা বাড়তি খাবার খাওয়ার চাহিদা কমিয়ে দেয়। এতে ক্ষুধা কমে যায় এবং দেহের ওজনও কমে যায়। সুতরাং ওজন কমাতে ডিমের অপরিসীম অবদান।

দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতেঃ ডিমে অবস্থিত লুটিন ও জেক্সান্থিন এই দুটি ক্যারটিনইয়েড আমাদের দৃষ্টি শক্তিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ডিমের লিউটিন চোখকে ভালো রাখে ও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- চোখে ছানি পড়া এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন থেকে চোখকে রক্ষা করে।

ক্যালরি বৃদ্ধিতেঃ ছোট্টো একটা ডিম হাজারো ভিটামিনে ভরা। এর ভিটামিন বি ১২ আপনি যা খাচ্ছেন সেই খাবারকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রত্যেক নারীর শরীরে রোজ কমপক্ষে ৫০ গ্রাম প্রোটিনের দরকার। একটি ডিমে থাকে ৭০-৮৫ ক্যালোরি বা ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন। সুতরাং সুস্থ থাকতে রোজ ডিম খেতেই পারেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ ডিমে আছে ভিটামিন ই। এটি কোষ এবং ত্বকে উত্‍পন্ন ফ্রি র‍্যাডিক্যাল নষ্ট করে স্কিন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। ডিমে প্রচুর ভিটামিন বিদ্যমান থাকায় সপ্তাহে যদি ৬টি ডিম খেলে  ৪০% পর্যন্ত স্তনের ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।

No comments:

Post a Comment

নারকেল তেল দিয়েই দূর করুন খুশকি!

নারকেল তেল দিয়েই দূর করুন খুশকি! নারকেল তেল দিয়েই দূর করুন খুশকি! শীত, গরম বা বর্ষাকালেও খুশকির যন্ত্রনা যেন মেটে না। পার্লারের আহাম...

Our Popular Posts